একজন পেশাদার 3D অ্যানিমেটর হয়ে ওঠা, অন্য অনেক পেশার মতো নয় যা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরের মধ্যে শেখা সম্ভব। এটি এমন একটি পথ যা সৃজনশীল শিল্পের মতো প্রচুর ভালবাসা এবং উৎসর্গ ছাড়া ভালো অবস্থানে যাওয়া যায় না। তবে আপনি যদি অ্যানিমেশনকে ভালোবাসেন তবে এটি সম্পূর্ণরূপে আপনাকে যোগ্য আউটপুট দিবে যা আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার এবং জীবনকে উজ্জ্বল করবে। সুতরাং অ্যানিমেশন শিখে বাংলাদেশে বসেও দারুণ ক্যারিয়ার তৈরি করা যায়।
আপনি খুব দ্রুত শিখে অ্যানিমেশনে ক্যারিয়ার গড়বেন এমন কিছু ভেবে এটা শিখতে শুরু করলে মাঝে আপনি হতাশাজনক, বিভ্রান্তিকর এবং সর্বোপরি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু যদি আপনি কনসেপ্ট এবং চরিত্রগুলি সেভাবে বাস্তবে পরিণত করতে পারেন এবং অন্যরা যখন আপনার চরিত্র উপভোগ করবে এটি আপনার জন্য সবচেয়ে পুরস্কৃত ক্যারিয়ার হতে পারে । আপনি যদি আবেগের সাথে কাজ করতে পারেন এবং সেভাবে শিখতে পারেন তাহলে কোন কিছুই আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না।
এই আর্টিকেলটি আপনাকে কীভাবে অ্যানিমেটর হতে হয়, ঘুড়ি লার্নিং কীভাবে আপনার প্যাশনকে সফল ক্যারিয়ারে রুপান্তরে সহায়তা করতে পারবে তার সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন।
অ্যানিমেশন কি?
অ্যানিমেশন একটি নির্জীব বস্তু, চিত্রিত বা 3D অবজেক্টে ভার্চুয়াল জীবন আনার কৌশল। এটি লাইফ ইল্যুশন তৈরি করার জন্য একের পর এক ক্রমিক চিত্রগুলিকে সন্নিবেশ করে।
এটি কেবল প্রযুক্তিগত সন্নিবেশ এবং ডিজনি বা পিক্সারে আমরা দারুণ সব এনিমেশন চরিত্র দেখে থাকি।
এক কথায় অ্যানিমেশনের মাধ্যমে নির্জীব চিত্রে জীবন আনাই হলো এ কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সারমর্ম। আর এটা করার অনেক উপায় আছে।
3D অ্যানিমেটরের কাজ
একজন 3D অ্যানিমেটরের কাজ হল মুভমেন্টের মাধ্যমে বস্তু বা অবজেক্টকে জীবিত করা। অ্যানিমেটর হিসাবে এই অবজেক্টকে জীবিত এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো অনুভব করানো আপনার উপর নির্ভর করে। 3D অ্যানিমেটরের দারুণ সব কাজ ভিডিও গেম, এনিমেশন মুভি, টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপন সহ মিডিয়ার বিভিন্ন কাজে বর্তমান বহুল ব্যবহৃত হয়। যদি কোন চিত্রে 3D এলিমেন্ট দেখেন, সেখানে 3D অ্যানিমেটরের কাজ হচ্ছে যাতে সেগুলিকে জীবিত করা যায়।
টয় স্টোরি বা আপ থেকে প্রতিটি 3D অ্যানিমেটেড মুভিতে 3D অ্যানিমেশনের দুর্দান্ত উদাহরণ পাওয়া যায়। সেই অবজেক্টগুলো শুধু কম্পিউটারের ডাটা, কিন্তু এটা দেখলে আপনি বিশ্বাস করবেন না? যে কেউ দেখছেন সেই চরিত্রগুলো জীবন্ত ও চিন্তাশীল ভাবে ধরে নেন। এভাবে অ্যানিমেটরের কাজ হল দর্শকদের ভুলিয়ে দেওয়া যে এই 3D অবজেক্টগুলি আসলে বাস্তব নয়৷ আপনি 3D অ্যানিমেটরকে পাপেটের উপর স্ট্রিং টেনে পাপেটারের মত ভাবতে পারেন।
3D অ্যানিমেটর হতে কি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন
অ্যানিমেশন শেখার সময় সবথেকে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো ধৈর্য। আগেই বলা হয়েছে, অ্যানিমেশন রাতারাতি শেখা বিষয় নয়; আপনি সত্যিই আউটপুট পেতে চাইলে আগে এটি এক বছর বা আরও বেশি সময় নিয়ে শিখতে হবে। তাই শুরুর আগে নিজের সাথে কমিটেড থাকতে হবে এবং সামগ্রিক অ্যানিমেশন প্রক্রিয়ায় ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে হবে। মনে রাখবেন, অ্যানিমেশন শিখতে অনেক সময় লাগে এবং ভালো করতেও অনেক সময় লাগে। আপনি সপ্তাহ ধরে একটি দশ-সেকেন্ড দীর্ঘ অ্যানিমেশনে কাজ করতে পারেন, তবে দুর্দান্ত অ্যানিমেশন তৈরি করতে প্রায়শই এর থেকে বেশি সময় লাগে। অ্যানিমেশনের কাজে কখনই তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
অ্যানিমেটরদের সর্বদা অধ্যয়ন করা উপভোগ করতে হয় এবং অ্যানিমেশন তৈরি করার সময় সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়। সর্বোপরি, অ্যানিমেটরদের অবশ্যই 3D অবজেক্টে জীবনে আনতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে চরিত্রে অনন্য বা আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করা।
অ্যানিমেটরদের অনুপ্রেরণা পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল মানুষের বাস্তব জীবন অধ্যয়ন করা। অ্যানিমেটররা সর্বদা বিশ্বকে সাধারণ ব্যক্তিদের চেয়ে আলাদাভাবে দেখে। তারা মানুষের ভঙ্গি থেকে কথা বলার ধরন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং শরীরের নড়াচড়া লক্ষ্য করে। অ্যানিমেশনের সাথে অপরিচিত একজন ব্যক্তি এসব বিবরণে মনোযোগ দিয়ে সময় নষ্ট করে না।
যদিও অ্যানিমেশন বেশ কঠিন কাজ তবে এটি অত্যন্ত মজাদার এবং উপভোগ্য। প্রায়শই অ্যানিমেটরদের আপনার অভ্যন্তরীণ শিশুত্বকে আবার খুঁজে বের করতে হয়। আপনি যদি কখনও নিজেকে আপনার ছোট ভাগ্নে বা সন্তানের সাথে তরবারি লড়াইয়ের ভান করতে থাকেন এবং বুঝতে পারেন যে আপনি এটি তার চেয়ে বেশি উপভোগ করছেন, তাহলে সম্ভবত অ্যানিমেটর হতে যা লাগে তা আপনার ভেতর এখনও আছে!
3D অ্যানিমেটরের প্রযুক্তিগত দক্ষতা কি থাকা প্রয়োজন
3D অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে, এ্যাডভান্সড প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুর্দান্ত অ্যানিমেশন তৈরি করে না; এটা অ্যানিমেটরদের কাজ। আপনি মায়ার মতো অ্যানিমেশন সফ্টওয়্যারে কীভাবে কাজ করতে হয় তা জানতে হবে, এজন্যই আপনাকে সফ্টওয়্যারটি শিখতে সময় ব্যয় করতে হবে। যদিও একটি 3D অ্যাপ্লিকেশন আপনার জন্য অ্যানিমেট করার জন্য একটি টুল মাত্র, তবুও আপনাকে সেই টুলটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখতে হবে, কারণ মায়ার মতো সফ্টওয়্যার একটি পেন্সিল এবং কাগজের চেয়ে জটিল।
শুরু করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা হল ঘুড়ি লার্নিং এর অ্যানিমেশন টিউটোরিয়াল যেমন মায়াতে অ্যানিমেশনের ভূমিকা বা 3ds ম্যাক্সে অ্যানিমেশনের ভূমিকা নিয়ে এখানে দারুণ সব কোর্স পাবেন। এই টিউটোরিয়ালগুলোর সাহায্যে আপনি সফ্টওয়্যারটির সাথে কমফোর্ট হবেন এবং ছোট ছোট এলিমেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হবেন। যা আপনাকে অ্যানিমেটে আরও সময় ব্যয় করতে উৎসাহ দিবে।
আরও কি বিষয়গুলো শুরুতেই জানা উচিৎ চলুন দেখে আসি।
১. আপনার পথ কি হবে তা জানুন
অ্যানিমেশন শেখার সময় আপনাকে যে পথে হাঁটতে হবে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি পিক্সার এবং ড্রিমওয়ার্কস টাইপের অ্যানিমেটেড মুভিতে কাজ করতে চান? আপনি কি ট্রান্সফরমার এবং অ্যাভেঞ্জার্সের মতো সিনেমায় কাজ করতে চান? নাকি গেমস বা অ্যাড ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়তে চান? ঘটনা যাই হোক না কেন, আপনাকে শেষ লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রতিটি শিল্প সাধারণত অ্যানিমেশনের ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যায়। সুতরাং প্রথমে, আপনাকে অ্যানিমেশনের মৌলিক বিষয়গুলি শিখতে হবে, তারপর আপনার পছন্দ অনুসারে দক্ষতা সেই স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে হবে।
২. কোথায় শুরু করবেন তা জানুন
আপনি সিনেমা বা গেমগুলোতে কাজ করতে চান না কেন, মৌলিক বিষয়গুলো দিয়ে শুরু করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্য ইলিউশন অফ লাইফ, টাইমিং ফর অ্যানিমেশন এবং দ্য অ্যানিমেটরস সারভাইভাল কিট-এর মতো অ্যানিমেশন সম্পর্কিত বেশ কিছু বই পাবেন। এই সমস্ত বই 2D অ্যানিমেশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু তারা এখনও 3D অ্যানিমেশনের জন্য প্রযোজ্য। প্রতিটি বই অগ্রগামীদের কাছ থেকে অ্যানিমেশনের মূল বিষয়গুলো শেখায়৷ এইগুলি বারবার অধ্যয়ন করুন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে অ্যানিমেশনের এখানে উল্লেখিত নীতিগুলো শিখুন, যা দুর্দান্ত অ্যানিমেশন তৈরিতে এবং আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সহজ করবে।
৩. কোথায় শিখতে হবে তা জানুন
যদি আপনি 3D অ্যানিমেটর হতে চান তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে আপনাকে শেখা শুরু করতে হবে। আর সঠিক পথে থাকতে আপনাকে ঘুড়ি লার্নিং এর কোর্স বেশ সহায়তা করবে। সুতরাং এই কোর্স দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনাকে প্রথমে সফ্টওয়্যারটি ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং এই জন্য ঘুড়ি লার্নিং এর অ্যানিমেশন কোর্স আপনাকে দ্রুত সামনে নিয়ে যাবে।
আপনার দক্ষতা বাড়ানোর আরেকটি অসাধারণ উপায় হল আপনার কাজ শেয়ার করার জন্য একটি কমিউনিটি খুঁজে বের করা যেখানে আপনার মতো অ্যানিমেটররা অন্যকে সহায়তা করেন। শেখার সর্বোত্তম উপায়ের মধ্যে একটি হল আপনার কাজের ফিডব্যাক পাওয়া। প্রথমে গঠনমূলক সমালোচনা পাওয়া কঠিন হতে পারে, কিন্তু আপনি যত বেশি এটি পেতে থাকবেন তত বেশি আপনি এগিয়ে যাবেন। আপনাকে দ্রুত এগিয়ে যেতে অনলাইন কমিউনিটি বেশ উপকারী হবে।
আর এজন্য ফেসবুক কিংবা লিংকডইনের অ্যানিমেশন গ্রুপগুলো বেশ সহায়ক। আপনি আপনার অ্যানিমেশন বা সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারেন এবং আপনার মতো অন্যান্য অ্যানিমেটররা সরাসরি আপনার শটে সমালোচনা করবে এবং সমাধান দিবে৷ আপনি নিজেও অন্যের অ্যানিমেশনে ফিডব্যাক দিন। তাতে অন্যের কাজের সমস্যার ক্ষেত্রগুলিও চিহ্নিত করতে পারবেন এবং আপনার কাজের সময় সেগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
৪. অভিনয় শিখুন
অ্যানিমেটররা মূলত অভিনেতা। চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে অভিনয় সাহায্য করে। তাই অভিনয় শেখা বেশ হেল্পফুল। এর মানে এই নয় যে আপনাকে অভিনয়ের ক্লাসে যোগ দিতে হবে। অবশ্যই এটি উপকারী হবে, তবে আপনি বই এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ের কৌশলগুলো আয়ত্ত করুন।
একজন অ্যানিমেটর হিসাবে, আপনাকে সাধারণত সংলাপের স্ক্রিপ্ট দেওয়া হবে এবং আপনাকে অবশ্যই চরিত্রটি স্ক্রিপ্ট অনুসারে ফুটিয়ে তুলতে হবে। আপনাকে অভিনয়ে নিজের আবেগগুলি চরিত্রের মাধ্যমে দেখাতে হবে। সুতরাং আপনার যদি অভিনয় দক্ষতা না থাকে তবে এটি অ্যানিমেশন ক্যারিয়ারে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পর্যবেক্ষণ করুন
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে তা হল বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। বিশ্বাসযোগ্য অ্যানিমেশন তৈরি করার জন্য, আপনাকে বুঝতে হবে কিভাবে মানুষের শরীর চলে, সেইসাথে প্রাণীরা কীভাবে ইন্টারেক্ট করে। এটি করার সর্বোত্তম উপায় হল বাইরে গিয়ে ভিডিও ফুটেজ শ্যুট করা। কীভাবে একজন ব্যক্তি হাঁটার সময় তাদের হাত দুলিয়ে দেয়? দৌড়ে ওজন পরিবর্তন কখন ঘটে? এই বাস্তব-মানব অভিজ্ঞতা বোঝার ফলে আপনার অ্যানিমেশনগুলি আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
৬. যোগাযোগ দক্ষতা শিখুন
একজন অ্যানিমেটর হিসাবে আপনাকে বিভিন্ন বিভাগের সাথে কাজ করতে হবে। আর এজন্য আপনার ভাল যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন। একটি ফিল্ম, বিজ্ঞাপন বা গেম তৈরি করা এসবে যোগাযোগ দক্ষতার ভুমিকা অনেক। আপনার কর্মীদের কাছে আপনার উদ্বেগ এবং ধারণাগুলি স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে অ্যানিমেটরদের একটি টিমের সাথে কাজ করতে হবে যাদেরকে একসাথে বেশ কয়েকটি সিকোয়েন্স অ্যানিমেট করার কাজ দেওয়া হয়েছে। একেকটি একক ব্যক্তির দ্বারা অ্যানিমেট করা সম্পূর্ণ সিকুয়েন্স পরবর্তীতে একটি শটে রুপান্তর করতে হয় যা ভালো যোগাযোগ দক্ষতা ছাড়া কঠিন হয়ে যায়। যদিও অ্যানিমেশন তৈরি করা একজন অ্যানিমেটরের কাজ, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একটি দলীয় প্রচেষ্টা।
৭. প্রাকটিস, প্রাকটিস এবং প্রাকটিস
একজন সফল অ্যানিমেটর হওয়ার জন্য, অনুশীলনই একমাত্র ভরসা। আগেই বলা হয়েছে, অ্যানিমেশন রাতারাতি শেখার বিষয় নয়। এটি সবচেয়ে কঠিন কাজগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রচুর ট্রায়াল এবং ত্রুটি বের করে এগিয়ে যেতে হয় যা মাঝে মাঝে আপনাকে হতাশ করতে পারে। আপনি হয়তো আগে শুনে থাকবেন একটি ভাল অঙ্কন পেতে হাজার হাজার খারাপ অঙ্কন লাগে। একইভাবে আপনি সেরা অ্যানিমেশনগুলো শুধুমাত্র অনুশীলনের মাধ্যমেই করতে পারেন। সুতরাং অ্যানিমেশন টুলগুলো বারবার অনুশীলন করুন এবং সর্বদা নিজেকে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায়গুলি সন্ধান করুন।
৮. সর্বদা শিখুন
একজন অ্যানিমেটর হিসাবে আপনার শেখার ইচ্ছা থাকতে হবে এবং আরও জ্ঞানের জন্য আগ্রহী হতে হবে। অ্যানিমেশন এমন কিছু নয় যা সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করা যায়— আপনাকে সবসময় নতুন জিনিস শিখতেই হেব। আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নতুন উপায় খুঁজুন, মন দিয়ে বিভিন্ন প্রাণীকে অ্যানিমেটিং করুন যা হয়তো আপনি আগে কখনও চেষ্টা করেননি বা আরও সূক্ষ্ম অভিনয়ের শট নিন যা আপনি আগে নেন নি।
৯. অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
আপনার স্বপ্নের কাজ বা লক্ষ্য হতে পারে পিক্সার বা ইনফিনিটি ওয়ার্ডের মতো একটি স্টুডিওতে কাজ করা, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আপনি সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আপনি পেতে পারেন এমন যেকোন অভিজ্ঞতা মূল্যবান এবং আপনার দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য এবং একটি চিত্তাকর্ষক পোর্টফোলিও তৈরি করার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। আপনি যত বেশি কাজের অভিজ্ঞতা পাবেন, বড় স্টুডিওগুলিতে কাজের সুযোগ ততই বাড়বে।
১০. প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যান
এটা মনে রাখবেন, আপনি হয়তো প্রথম চাকরিতে সবচেয়ে সুন্দর সুযোগ নাও পেতে পারেন। এজন্য আপনাকে সর্বদা নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সংগ্রাম করতে হবে। আপনার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টগুলো বিরক্তিকর হিসাবে দেখবেন না বা ধরে নিবেন যে সেগুলি অভিজ্ঞ অ্যানিমেটররা নতুন ছেলেদের দেয় তাই তাদের সেগুলি করতে হয় না। প্রতিটি শটের জন্য যখন সুপারভাইজাররা আপনার আগ্রহ এবং দক্ষতা দেখতে পাবেন, তখন আরও জটিল এবং উত্তেজনাপূর্ণ শট আপনাকে দেওয়া হবে।
আপনাকে এটিও মনে রাখতে হবে যে আপনি যখন পেশাদারভাবে অ্যানিমেটিং শুরু করছেন তখন আপনি নিজের জন্য আর অ্যানিমেটিং করছেন না। আপনি যখন শিখছিলেন, আপনি আপনার নিজের শটগুলি আপনার নিজস্ব ধারণাগুলিকে অ্যানিমেট করেছিলেন। আপনি যখন একটি স্টুডিওতে কাজ শুরু করছেন, আপনি অন্যের জন্য অ্যানিমেটিং করছেন। সুতরাং এই সময় আপনাকে সেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
একজন অ্যানিমেটর কত টাকা আয় করতে পারেন?
অ্যানিমেটর হিসাবে আপনি যে পরিমাণ আয় করবেন তা নির্ভর করবে আপনি কি ধরণের অ্যানিমেশন কাজ করছেন, আপনি কতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অন্যান্য অনেক জবেও বেতনের সীমা একইভাবে কাজ করে।
অ্যানিমেশন কাজের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং টিমভিত্তিক প্রকল্প উভয়ই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সেইসাথে একটি কর্পোরেশনের সাথে ফ্রিল্যান্সভিত্তিক কাজও করতে পারেন। এছাড়াও আপনি বিজ্ঞাপন কোম্পানি, সফ্টওয়্যার ডিজাইন ফার্ম, বা মুভি স্টুডিওতে কাজ করতে পারেন। আর সেজন্য আপনার কাজ অনুসারে বেতন প্রভাবিত করবে।
পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, একজন অ্যানিমেটর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পয়েন্টে উপার্জন কম-বেশি করে থাকে। এন্ট্রি-লেভেল অ্যানিমেশনে ৩0 হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। মিডিয়াম লেভেলের চাকরিতে একটু বেশি, প্রায় ৭০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। প্রচুর অভিজ্ঞতা বা বিশেষ দক্ষতার ক্ষেত্রে অ্যানিমেটরদের ইনকাম ১.৫ লাখের কাছাকাছি বা তার বেশিও হয়ে থাকে।
ক্রমাগত শিক্ষা আপনাকে বেশি বেতন পেতে সাহায্য করবে। তাই শেখা চালিয়ে যাওয়া, হাতে-কলমে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করা সর্বদা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন অ্যানিমেশন একটি অত্যন্ত মজাদার এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা।
প্রসেস অফ এনিমেশন
এখন যেহেতু আপনি অ্যানিমেশন কী তার প্রাথমিক ধারণাগুলি বুঝতে পেরেছেন, আসুন অ্যানিমেশন তৈরির সম্পূর্ণ প্রসেসটি জেনে নিই।
অ্যানিমেশন তৈরির ধাপগুলো কী কী?
১. গল্প এবং স্ক্রিপ্ট
যেকোনো অ্যানিমেশন তৈরির প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল একটি ভালো গল্প।
আপনি যদি শুরু থেকে আপনার গল্প সঠিকভাবে না পান, তাহলে আপনার অ্যানিমেশন যতই ভালো হোক না কেন, মানুষ এটি দেখে উপভোগ করবে না। সুতরাং গল্প প্রথম আসে এবং নিশ্চিত করুন যে এটি যথেষ্ট আকর্ষনীয়।
একবার গল্প প্রস্তুত হয়ে গেলে, পরবর্তী ধাপটি হল স্ক্রিপ্ট লেখা।
২. কনসেপ্ট এবং স্টোরিবোর্ড তৈরি
একবার স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত হয়ে গেলে, ভিজ্যুয়াল স্টাইলের জন্য কনসেপ্ট তৈরি করা হয়।
এর পরে একটি স্টোরিবোর্ড তৈরি করা হয় যা সম্ভবত অ্যানিমেশটি বের করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলির মধ্যে একটি।
৩. অ্যানিমেশন তৈরি
আমরা অবশেষে অ্যানিমেশনের জন্য প্রস্তুত! এখানেই আপনি অবশেষে অ্যানিমেশনে জীবন নিয়ে আসবেন। চরিত্রগুলি নড়াচড়া করতে শুরু করে, এবং আপনি দেখতে পাবেন অ্যানিমেশনের আত্মা আপনার সামনে জীবিত হয়ে উঠেছে।
খারাপ অ্যানিমেশন খারাপ অভিনয়ের মতো— লেখা এবং গল্প শক্ত হলেও, ডেলিভারি ভুল হলে মানুষ তা পছন্দ করবে না।
৪. টেক্সচারিং, আলো এবং রেন্ডারিং
এই ধাপটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 3D অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যদিও 2D অ্যানিমেশন একই ধরনের পোস্ট-প্রোডাকশন ধাপের মধ্য দিয়ে যায় এবং স্টপ-মোশন অ্যানিমেশন তাদের শটগুলির উপরে কম্পোজিটিং এবং বিবিধ প্রভাবগুলির জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করে।
3D-এ, মডেলগুলিকে টেক্সচার করা দরকার, যার অর্থ মডেলগুলির বিভিন্ন অংশে নির্ধারিত বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা।
তারপরে আপনি ভার্চুয়াল লাইট দিয়ে শটগুলিকে আলোকিত করবেন, বাস্তব জীবনে আলো কীভাবে কাজ করে তা আপনি যতটা ঘনিষ্ঠভাবে করতে পারবেন তা ততো বেশি সুন্দর হয়।
তারপর যখন আপনার শট টেক্সচার এবং আলোকিত হয়, আপনি রেন্ডারিং প্রক্রিয়া শুরু করেন, যা কম্পিউটার আমাদের দৃশ্যের সমস্ত ডেটা গণনা করে এবং এটি থেকে স্থির চিত্র তৈরি হয়।
৫. সম্পাদনা ও রং ঠিক করা এবং সাউন্ড ডিজাইন
একবার আপনার ছবিগুলো প্রস্তুত হয়ে গেলে, আপনার সেগুলিকে সম্পাদনা প্রোগ্রামে ফিরিয়ে আনেন৷ সম্পাদনা টাইমলাইনে আপানাকে কিছু কালার কারেকশন এবং গ্রেডিং করতে হবে।
কালার কারেকশন হল প্রতিটি শটের কালার ম্যানিপুলেট করার প্রক্রিয়া যাতে এটি তার আগে/পরে আসা একটির সাথে মিলে যায়। আপনি এটাও নিশ্চিত করবেন যে প্রতিটি শটে খুব সাদা বা খুব কালো অংশ নেই, মূলত কাজ করে যাবেন যাতে আপনি পুরো অ্যানিমেশন জুড়ে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সঠিক রঙ পান।
তারপরে আপনাকে অ্যানিমেশনকে গ্রেড করতে হবে, যেটি আরও মজাদার এবং সৃজনশীল অংশ, যেখানে আপনি পুরো ফিল্মটির জন্য একটি ভিজ্যুয়াল স্টাইল তৈরি করার চেষ্টা করবেন এবং এটিকে একটি স্বতন্ত্র চেহারা দিতে পারবেন।
সঙ্গীত সাধারণত এমন কিছু নয় যা আমরা কেবল শেষের দিকে ব্যবহার করি, আপনাকে পুরো প্রোডাকশন জুড়ে এটি আপনার সাথে রাখতে হবে যাতে এটি গল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
সাউন্ড ডিজাইনার তারপর অ্যানিমেশনটির সমস্ত সাউন্ড ইফেক্ট যেমন পরিবেশ এবং ভয়েস, সেইসাথে অ্যানিমেশনটির চূড়ান্ত অডিওতে দক্ষতা এবং মিক্সিং চূড়ান্ত করে।
শেষ কথা
আশা করি এখন আপনি একজন সফল 3D অ্যানিমেটর হতে কি লাগে তা বুঝতে পেরেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া আপনার উপর নির্ভর করে। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে বা আরও কিছু পরামর্শের প্রয়োজন হয়, নীচের মন্তব্য অংশে শেয়ার করুন। আর অ্যানিমেশন নিয়ে ঘুড়ি লার্নিং এর সকল কোর্স দেখতে এই লিঙ্কে প্রবেশ করুন। ধন্যবাদ।
Answer these 5 questions to assess yourself and get a bonus 5 points.
Take the quiz now